ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম । বিস্তারিত তথ্য

আল্লাহ্‌ তায়ালা তার বান্দাদের সৃষ্টি করেছেন মূলত তার ইবাদত করার জন্য। আমরা সাধারণত ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের বিষয়ে জানি। কিন্তু অনেকেই জানি না ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম বা ইশরাকের নামাজ কি? জানি না ইশরাকের নামাজ কয় রাকাত এবং কিভাবে পড়তে হয়। কি সাওয়াব পাওয়া যায় ইশরাকের নামাজে।

আল্লাহ্‌ পবিত্র কোরআনে অলেন, “ আমার বান্দারা, তোমরা সালাত আদায় করো এবং রুজির উদ্দেশ্যে জমিনে ছরিয়ে পরো”। ইসলামের মূল খুঁটি পাঁচটি। (কলেমা, নামাজ, রোজা , হজ, জাকাত)। কিন্তু হজ করা এবং জাকাত দেওয়ার জন্য আর্থিক ভাবে যথেষ্ট সামর্থ্যবান হতে হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন একবার ইশকের নামাজ আদায় করলে একটি  পরিপূর্ণ হজ এবং ওমরাহ্‌ এর সাওয়াব পাওয়া যায়?

আজকে আমরা জানবো, ইশরাকের নামাজ কি, ইশরাকের নামাজের সময়, ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত, ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম, ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত, ইশরাকের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়, ইশরাকের নামাজ সুন্নত না নফল এই বিষয়ে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম সংক্রান্ত সবকিছু।

ইশরাকের নামাজ কি?

ফজরের নামাজের পরে সূর্য উদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করে সূর্য ওঠার পরে ইশরাকের নামাজ পড়তে হয়। কোনো কোনো ব্যক্তির মতে সূর্য ওঠার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর আবার কারো মতে সূর্য ওঠার ২০ থেকে ২৫ মিনিট পরে এই নামাজ পড়তে হয়।

আরও সহজভাবে বললে, আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রায় প্রতিদিন ফজরের নামাজ আদায়ের পর মসজিদে অবস্থান করতেন।

বিভিন্ন আমল করতেন সাহাবিদের সাহে নিয়্যে। এবং সূর্য ওঠার/ উদয় কিছুক্ষণ পর ২ রাকাত ২ রাকাত করে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। এই নামাজকে ইশরাকের নামাজ বলে।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ইশরাকের নামাজ কি এবং নবীজি ইশরাকের নামাজ কখন আদায় করতেন। এবার জানবো, ইশরাকের নামাজের সময় সম্পর্কে।

ইশরাকের নামাজের সময় কখন ?

মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনাদর্শের সব বিষয়ে মানতে বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। আর নবীজি (সাঃ) ইশরাকের নামাজ পড়তেন ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করার পর অপেক্ষা করতেন বিভিন্ন ইবাদতের মধ্যে। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে না পড়ে কিছুক্ষণ পড়ে নবীজি এই নামাজ আদায় করতেন। একই সাথে আরও ২ রাকাত নামাজ আদায় করতেন।

হাদিসের ভিত্তিতে আলেমরা বলেন, সূর্য উদয়ের ১০ থেকে ১২ মিনিট পর এই নামাজ পড়তে হয়। তবে কারো কারো মতে ২০ মিনিট পর পড়া ভালো। এতক্ষণে নিশ্চয়ই ইশরাকের নামাজের সঠিক সময় কখন তা বুঝতে পারছেন।

ইশরাকের নামাজ মূলত ২ রাকাত। কিন্তু আমাদের নবীজি (সাঃ) ইশরাকের ২ রাকা নামাজের সাথে আরও দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। এর বিশেষ বিশেষ ফজিলত এবং মর্যাদা আছে। জানবো পর্যায়ক্রমে। এবার আমরা জানবো ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম কি 

এই নামাজে নির্দিষ্ট এবং সু স্পষ্ট কোনয় নিয়ম নেই। অন্যান্য নামাজের মতোই শুধু দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করতে হবে।

অর্থাৎ, ইশরাকের নামাজের জন্য আলাদাভাবে কোনো নিয়ম মানতে হবে না। অন্যান্য নামাজের মতোই স্বাভাবিক ভাবে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এতক্ষণে যে ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম কি এবং ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত কি করতে হবে।

ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত কি?

ইশরাকের নামাজের ফজিলত কি তা জানার আগে জেনে নেওয়া যাক ফজিলত অর্থ কি? ফজিলত অর্থ সফল বা বিজয়ী বলা হয়। আর নামাজের ফজিলত হচ্ছে, নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে বান্দা কি লাভ করল তাই বুঝায়। এবার ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত কি বা লাভ কি তা নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন।

আরও পড়ুনঃ রোজা ভঙ্গের কারণ, মাকরুহ, যখন রাখা লাগবে না

ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত প্রসঙ্গে  আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে, “মহানবী (সাঃ) যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকির করে তারপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সেই ব্যক্তি একটি পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহ হজের সাওয়াব পাবেন”। (তিরমিজি – হাদিস নংঃ ৫৮৬)

এছাড়াও আরও একটি ফজিলত আছে ইশরাকের নামাজের মধ্যে। নবীজি ইশরাকের নামাজের সাথে আরও দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। অর্থাৎ, মোট চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন নবীজি (সাঃ)।

ইশরাকের নামাজের সাথে আরও দুই রাকাত নামাজ প্রসঙ্গে হাদিসে কুৎসিতে বলা আছে, “আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন, বান্দা যদি সকালে চার রাকাত নামাজ আদায় করে, ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বান্দার যত কাজ সব কাজের জিম্মাদার হয়ে যান আল্লাহ্‌ তায়ালা”।

আরও পড়ুনঃ “সালাতুল হাজত” সালাত আদায়ের উপকার ও নিয়ম

নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ইশরাকের নামাজের ফজিলত কত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি চাইলেই নিয়মিত প্রতিদিন ঘরে বসেই সামান্য কিছু সময়ের মাধ্যমে একটি পরিপূর্ণ হজ এবং একটি ওমরাহ্‌ হজের সাওয়াব পেতে পারেন।

যা আপনার ইসলামের পাঁচটি খুঁটি পূর্ণ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এবার একনজরে দেখে নিব ইশরাকের নামাজের ফজিলত কি কি?

১) একটি পরিপূর্ণ হজ এবং একটি ওমরাহ্‌ হজের সমান সাওয়াব।

২) সারাদিন আল্লাহ্‌ তায়ালা নিজে ওই ব্যক্তির সকল কাজের জিম্মাদার হয়ে যাবেন।

এবার আমরা জানবো ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত সম্পর্কে।

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত কি? । ইশরাকের নামাজ

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়মের মতো ইশরাকের নামাজের নির্দিষ্ট কোনো নিয়ত নেই। শুধু মাত্র নিয়তের সময় অন্য নামাজে নিয়তের সময় বলা নামের জায়গায় “নফল বা ইশরাকের দুই আকাত নামাজ আদায় করছি’ এই বলে আল্লাহু আকবর বলে নামাজ শুরু করলেই হবে।

আরও পড়ুনঃ ঈদুল ফিতরে করণীয় বর্জনীয় সমূহ

আপনি ইশরাকের নামাজের জন্য নিজেকে তৈরি করছন। নামাজে দারিয়েছেন ইশরাকের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে। এটাই মুলত আপনার নামাজের নিয়ত সম্পন্ন হয়ে যায়। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ত কি এবং কিভাবে ইশরাকের নামাজের নিয়ত করতে হয়।

ইশরাকের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়? । পড়ার নিয়ম

ইশরাকের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয় তা অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন। এর প্রকৃত উত্তর হচ্ছে ইশরাকের নামাজের জন্য কোনো সূরা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি।

আপনি যেকোনো সূরা দিয়েই অন্যান্য নামাজের মতো ইশরাকের নামাজ পড়তে পারেন।

এই নামাজে নির্দিষ্ট কোনো সূরা দিয়ে আদায় করতে বলা হয়নি।

তাই আল্লাহর বান্দা যেকোনো সূরা দিয়ে ইশরাকের নামাজ যেকোনো সূরা দিয়ে পড়া যাবে।

ইশরাকের নামাজ সুন্নত না নফল ? । নামাজ পড়ার নিয়ম

ইশরাকের নামাজ মূলত নফল নামাজ। ইশরাকের নামজ ইশরাকের উদ্দেশ্য বা নফল হিসেবে আদায় করলেও হবে। ইশরাক নাআজ নফল নামাজ হিসেবে বিবেচিত।

কখন ইশারকের নামাজ পড়া যাবে না?

ঈদের নামাজের আগে ইশরাকের নামাজ পড়া যাবে না।

এছাড়া যখন যখন নফল নামাজ পড়া যাবে না তখন তখন ইশরাকের নামাজ পড়ে যাবে না। কারণ ইশরাকের নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ।

আরও পড়ুনঃ এই দোয়া গুনাহ মাফ এর দোয়া যা পড়ে ঘুমালে জীবনের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়

যেহেতু ইশরাকের নামাজ ফজর এর পরে সূর্য উঠলে পড়তে হয়, তাই সাধারণত ঈদের নামাজের আগে বাদে সবসময় ইশরাকের নামাজ পড়া যাবে।

ইশরাকের নামাজ নিয়ে বিস্তারিত । ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম

ইশরাকের নামাজ নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু জানতে চান।

এই পোষ্টে ইশরাকের নামাজ নিয়ে সব বিষয়ে বিস্তারিত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম থেকে শুরু করে ইশরাকের নামাজ সুন্নত না নফল ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম এবং নিয়ত।

আশা করছি এই পোস্টটি পড়লে ইশরাকের নামাজ নিয়ে আর কিছুই অজানা থাকবে না।

আরও পড়ুনঃ যে আমল গুলো সহজে ইমানদারকে জান্নাতে নিয়ে যাবে

এবার আমরা ইশরাকের নামাজ নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্তর জানবো।

ইশরাকের নামাজ নিয়ে FAQS

ইশরাকের নামাজ কয় রাকাত?

২ রাকাত। কিন্তু নবীজি ইশরাকের নামাজের সাথে আরও দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।

ইশরাকের নামাজ সুন্নত না নফল?

ইশরাকের নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ।

ঈদের দিন কি ইশরাকের নামাজ পড়া যায়?

না, ঈদের দিন ঈদের নামাজের আগে নফল নামাজ পড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই ঈদের দিন ঈদের নামাজের আগে ইশরাকের নামাজ পড়াও নিষিদ্ধ।

ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত কি?

ইশরাকের নামাজ পড়ার একাধিক ফজিলত আছে। একটি পরিপূর্ণ হজ এবং ওমরাহ্‌ হজের সমান সাওয়াব পাওয়া যায়।

এবং আল্লাহ্‌ বান্দার সকল কাজ নিজ জিম্মাদারিতে রাখেন।

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কিত সর্বশেষ

আজকের পোষ্টে আমরা জেনেছি  ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম কি, কিভাবে ইশরাকের নামাজ পড়তে হয়।

জেনেছি কখন কখন ইশরাকের নামাজ পড়া যাবে না।

আরও পড়ুনঃ কোরবানির দোয়া । কোরবানি সম্পর্কে হাদিস 

আশা করছি আজকের পোস্ট থেকে ইশরাকের নামাজ সম্পর্কিত সবকিছু জানতে পেরেছেন।

এছাড়াও আরও কিছু জানতে আইলে কমেন্ট করে জানান। আমরা আপনার কমেন্টের উত্তর দিবো।

এছাড়াও নিয়মিত আমাদের আর্টিকেল পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট।চোখ রাখুন আমাদের

9 thoughts on “ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম । বিস্তারিত তথ্য”

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.